বাগমারায় সিলিন্ডার গ্যাসের দাম নিয়ে বিপাকে গ্রাহকরা- বাগমারা টাইমস
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারাঃ
সরকার দুই দফা মূল্য কমালেও বাগমারায় লকডাউনের অজুহাতে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ইচ্ছামত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অধিকাংশ গ্রাহকদের। তাদের অভিযোগ, পূর্বের দামের চেয়ে এলপিজি প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য দুই দফা কমে সাড়ে আটশ থেকে সাড়ে নয়শ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এই দামে কোথাও গ্যাস মিলছে না। উপজেলার অধিকাংশ দোকানী যমুনা বসুন্ধরা সহ বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এখনও পূর্বের মত সাড়ে নয়শ থেকে হাজার পঞ্চাশ টাকা হরে আদায় করছে। অনেক দোকানী লকডাউনের অজুহাতে এর চেয়েও বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে বলে বিভিন্ন এলাকার গ্যাস ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা গেছে।
সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারী জনসাধারণ বলছেন, করোনার অজুহাত তুলে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী দোকানী পূর্বের লকডাউনের ক্ষতি পুষাতে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে। ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ের গ্যাস বিক্রেতা হাজী আব্দুল মালেক জানান, তার দোকানে বিভিন্ন দাম ও মানের গ্যাস রয়েছে। তিনি বসুন্ধরা সাড়ে বার কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ৯৫০ টাকা এবং একই ওজনের যমুনা গ্যাস ৯০০ টাকা ও বেক্সিমকো গ্যাস ৯৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, এসব গ্যাস তিনি সামান্য লাভে বিক্রি করে থাকেন। তবে সরকার যে ভাবে গ্যাসের দাম কমিয়েছে সে সংক্রান্ত কোন আদেশ নির্দেশ তারা এখনও পাননি। পেলে সেই মত ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।
তবে গতকাল শনিবার ভবানীগঞ্জ বাজারে একই গ্যাসের বাড়তি মূল্য নিতে দেখা গেছে বেশ কিছু দোকানীকে। বসুন্ধরা সাড়ে বার কেজির একটি সিলিন্ডার হাজী আব্দুল মালেকের দোকানে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও একই গ্যাসের সিলিন্ডার ভবানীগঞ্জ লতিফ মার্কেটের বাশার ইলেকট্রনিক এ বিক্রি করতে দেখা গেছে ১০০০ টাকা দরে। দোকানদার সাইফুল ইসলাম দুলাল জানান, এই গ্যাস তারা আরো বেশি দামে বিক্রি করতেন। এখন সরকার দাম কমানোর ফলে ১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে সরকার আরো দাম কমিয়ে থাকলেও এর চেয়ে কম দামে তিনি গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই্ বাজারের আরো বেশ কিছু গ্যাসের দোকানে ঘুরে একই নাম ও ওজনের গ্যাসের সিলিন্ডারের দামের মধ্যে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকার দামের ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন বাজারে প্রশাসনের কোনই নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই যে যার মত মূল্য আদায় করছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে ভবানীগঞ্জ বাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকার কোথাও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াশ কপোর্রেশন (বিপিসি) নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না। সর্বত্রই বিপিসি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে দোকানীরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস নিয়ে দোকানীরা একটি অলিখিত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তাদের মতে এখানে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকায় প্রশাসনও এই সিন্ডিকেট ভাংগতে মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে না। তাদের মতে এর আগে উপজেলাব্যাপি লবনের দাম কেজিতে দুইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গড়ে ওঠে লবন সিন্ডিকেট। তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ ব্যাপক অভিযান ও জেল জরিমানা করে লবন সিন্ডিকেট দমন করলে তখন বেঁকে বসেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। সে সময় তার এক আত্মীয় লবন মজুত করায় তার জরিমানা হলে ভাইস চেয়ারম্যান এমপির দারস্থ হয়ে ইউএনওকে বদলির তৎপরতা চালালে ইউএনও পরবর্তী অভিযান গুলো দায়সারা ভাবে চালিয়ে শেষ করেন। স্থানীয় ভুক্তভোগি মহলের মতে এবারো গ্যাসের বেলায় একই সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়েছে বলে তারা দাবী করেন। তা না হলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে দ্বিগুণ মূল্যে গ্যাস বিক্রি করার সাহস পেত না দোকানীরা। স্থানীয়দের মতে শুধু গ্যাসই নয়, বাগমারার বিভিন্ন হাটে বাজারে এখন প্রায় প্রতিটি পন্যের দাম অনেক বেশি হারে আদায় করছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। এই বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লকডাউনের আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন সেই তেল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তাদের মতে, এখানে ভোক্তা অধিকার আইন থাকলেও এটা শুধু কাগজে কলমে রয়েছে। এর বিন্দুমাত্র বাস্তাবায়ন নেই। তাই যেখানে যে যার মত পারছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ আহম্মেদ জানান, অচিরেই গ্যাস সহ অন্যান্য পন্যের মূল্য যাচাই বাছাই করতে বাজার মরিটরিং শুরু করা হবে। কোথাও কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।