বাগমারায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতন ও স্বর্নালংকার ছিনতাই-বাগমারা টাইমস
মাহাফুজুর রহমান প্রিন্সঃ
তুই চরিত্রহীন, তুই নষ্টা, তুই বেশ্যা এমনি নানান অপবাদ দিয়ে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে ভয়ানক ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তার শরীর থেকে স্বর্নালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে তাকে সমাজ থেকে এক ঘরে করে রেখেও ক্ষান্ত হয়নি তথাকথিত সমাজ পতিরা। আসন্ন কুরাবানির ঈদেও তাকে কুরবানীর ভাগ থেকেই বঞ্চিত করে রেখেছে। যে প্রবাসীদের টাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। সেই প্রবাসীর এ অহসায় স্ত্রীকে এমনি ভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সমাজে একঘরে করে রাখা ও নির্যাতন করে তার গায়ের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় হতবাগ হয়ে পড়েছ আশেপাশের লোকজন।
গত ৬ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার চানপাড়া মহল্লায় এই অমানবিক ঘটনা ঘটলেও নির্যাতনের শিকার প্রবাসীর স্ত্রী সেলিমা বেগম স্থানীয় সমাজপতিদের কাছে এর বিচার না পেয়ে শরনাপন্ন হন বাগমারা থানা পুলিশের। পুলিশ তার অভিযোগটি হাতে হাতে নিলেও তা এখনো মামলা হিসাবে নথিভুক্ত না কারায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন গৃহবধু সেলিমা বেগম।
পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, সেলিনার স্বামী সোহেল রানা গত বছর ধরে সৌদি প্রবাসী। তাদের দশ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সেলিনা তাকে নিয়ে স্বামী গৃহে বসবাস করেন। সেলিনা অভিযোগ করে বলেন, এবাদত সর্দার সহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা গ্রামের রাস্তায় প্রায় তাকে উৎতক্ত করে এবং কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। তিনি তাদের কথায় কর্নপাত না করায় তারা পরিকল্পিত ভাবে গত ৬ জুলাই রাতে এবাদত সর্দার তার বাড়িতে এক প্রহসনের সালিসী বৈঠক ডেকে সেখানে সেলিনাকে জোরপূর্ব ধরে এনে তাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করা হয় এবং এক পর্যায়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে এবাদতের স্ত্রী পারুল বেগম সেলিনার চুলের মুটি ধরে মাটিতে টানা হেঁচড়া করে তার কানের ৫ আনা ওজনের দুল ছিনিয়ে নেয়। সেলিনাকে এভাবে মারপিট করার সময় এবাদুর ও তার স্ত্রীকে পারুলকে প্রতিবেশি বাবলু(৪২) সাহায্য সহযোগিতা করে বলে সেলিনা অভিযোগ করেন। এ সময় সেলিনার আত্মচিৎকারে প্রতিবেশি আনারুল, শামসুল ও শাহজাহান এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে বাড়ি পৌছে দেয়। সেলিনা অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন রাতে তারা প্রাহসেনর সালিস বৈঠক ডেকে তাকে সমাজ থেকে এবং কুরবানীর অংশ থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগে নেওয়া হয়। আমি এর প্রতিবাদ করে কেন সমাজ থেকে বাদ দেওয়া হবে তা জানতে চাইলে তারা আমার উপর অকর্থ নির্যাতন শুরু করে বলে আমি নাকি নষ্টা চরিত্রহীন। তাই আমাকে তাদের সমাজে রাখা হবে না। এক পর্যায়ে এবাদের স্ত্রী পারুল আমার কানের দুল ছিনিয়ে নেয় এবং চুলের মুটি ধরে টানা হেঁচড়া করলে আমি মাথায় প্রচন্ত আঘাত পাই। আমি এসব ঘটনার সুষ্ট বিচার চেয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের কাছে গেলে তারা আমাকে পাত্তা না দেওয়ায় আমি বাগমারা থানা পুলিশের শরনাপন্ন হয়েছে । কিন্তু এখানেও আমি বারবার হয়রানীর শিকার হচ্ছি। তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে চলেছে । আমার স্বামী যাতে আমাকে তালাক দেয় আমি যাতে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাই এমনি নানান চক্রান্ত তারা শুরু করেছে ।বিষয়ে গ্রাম প্রধান ইবাদত সর্দারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আবারও সেলিনাকে নষ্টার অপবাদ দিয়ে বলেন, ওই নারী এর আগেও ধরা পড়েছে। কেউ তার বিচার করেনি। তাই আমরা তাতে সমাজ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে তাকে মারপিট বা তার কানের দুল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগকে তিনি মিথ্যা বলে দাবী করেন। বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, এমন একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য এক অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই পরবতী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহিদ হাসান জানান, অভিযোগের সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সমস্যার সমাধান গ্রামবাসীরা নিজেরাই করবেন বলে দুই দিন সময় চেয়েছেন।