বাগমারায় পাট ধোয়ায় ব্যস্ত কৃষক- বাগমারা টাইমস
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা টাইমসঃ
বাগমারায় এবার পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা। তবে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়ার কাজে পর্যাপ্ত শ্রমিক না পেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন চাষীরা। এছাড়া কৃষকরা বর্তমান পাটের বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাভের হিসাব নিয়ে শংকায় রয়েছেন তারা।
পাট চাষী সূত্রে জানা গেছে, পাটের বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময় মত বৃষ্টিপাত হওয়াতে পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পাট চাষীরা পানিতে পচানী দেওয়া পাট পরিস্কার করা ধোয়া) শুরু করেছেন। তবে ব্যাপক বন্যার কারণে পাট ক্ষেতের আশেপাশে পর্যাপ্ত জলাশয় থাকলেও পাট ধোওয়া শ্রমিক সংকটের কারণে পাট চাষীরা বড়ই বেকায়দায় পড়েছেন। বর্তমানে বাগমারায় দু’বেলা খাবার দিয়ে একজন পাট ধোয় শ্রমিকের মজুরী সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। সারা দিনে একজন শ্রমিক ১৮ থেকে ২০ বিড়া (৮ মুঠায় এক বিড়া) পাট ধুতে পারে। অনেকে চুক্তি ভিত্তিক পাট ধোয়া শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।
উপজেলার কাচরীকোয়ালীপাড়া ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের কয়েকজন পাট চাষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ বাবদ বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা, পচানী দিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে পাট ছিলা ও রোদে শুকিয়ে তা ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এর মধ্যে পাট কাটা ও তা পরিবহন সহ পাট গাছ জাগ দেওয়ার জন্য সেগুলো কোন জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ সহ বিঘা প্রতি খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। তাদের মতে, এ বছর পাটের আশ মোটা না হওয়ায় বিঘা(৩৩ শতক) প্রতি ৭ থেকে ৮ মণ হারে উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে উপজেলার কয়েকটি হাটে নতুন পাট বেচা কেনা শুরু হয়েছে। মানভেদে এসব পাটের দর প্রতি মন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ টাকা । পাট চাষীদের মতে, পাটের এই বাজার চলমান থাকলে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন বলে আশাবাদী। তবে তারা ধানের মত পাটের বাজারও সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন । এ ক্ষেত্রে তারা সরকারি ভাবে পাটের দাম নির্ধারন ও পাট ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানান। তাদের মতে, বর্তমানে পলিথিন যে ভাবে মহামারী আকার ধারন করছে এবং যত্রতত্র ভাবে পলিথিনির ব্যবহার বাড়তে থাকায় পরিবেশ ক্রমশই বিষময় হয়ে ওঠছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য পাটের বহুমূখী ব্যবহার ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান পাট একটি পরিবেশ বান্ধব বাতাসে অক্রিজেন সৃষ্টিকারী উদ্ভিত আখ্যায়িত করে বলেন, বাগামারা ও আশেপাশর এলাকায় পাটের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরতে শুরু করেছে। বিগত তিন বছরের ব্যবধানে এখানে ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মতে, বর্তমান বাজার দরে পাট চাষ করে কৃষকের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।