বাগমারায় আশ্রায়ন প্রকল্পে ঠিকানা পেল ২৫২ পরিবার- বাগমারা টাইমস
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা:
বাগমারার শতবর্ষী বৃদ্ধ আবুল কালামের চোখেমুখে এখন আনন্দঅশ্রু। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি ভাবতেও পারেননি তার ভাগ্যে জুটবে একটি পাকাবাড়ি তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার। শুধু আবুল কালামই নয় বাগমারার ১৬ টি ইউনিয়নে এমনই আশ্রয় জুটেছে ২৫২ পরিবারের। এক সময় তাদের না ছিল কোন ঘরবাড়ি না ছিল কোন ভিটেমাটি। তারা এখন পাকা বাড়ির মালিক।
হতভাগ্য বৃদ্ধ আবুল কালামের দীর্ঘ একশটি বছর কেটে গেছে অনাদরে অবহেলে। ফরিদপুর ছিল তার পৈত্রিক নিবাস। নব্বয়ের দশকে নদী ভাঙ্গনের কবলে সর্বস্ব হারিয়ে তিনি স্ত্রী পুত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। এভাবে তার কয়েকবছর কেটে যায় জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে। অবশেষে আবুল কালামের ঠাঁই হয় উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের নিমপাড়া গ্রামের এক সহৃদয়বান ব্যক্তির দেয়া একখন্ড জমিতে। এখানেই আবুল কালাম একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে কাটিয়ে দেন আরো তিন দশক। এরি মাঝে আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী মৃত্যুবরণ করে। ওই ঘরে তার তিনটি পুত্র সন্তান থাকলেও অভাবের তাড়নোয় তারা যে যার মত বিয়ে সাদি করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। জীবন চলার অবলম্বনের জন্য আবুল কালাম ছবিলা বিবি (৮০) নামে এক বৃদ্ধাকে জীবন সঙ্গী করেন। এই ছবিলা বিবিই এখন ভিক্ষা করে আবুল কালামকে ভরন পোষণ দেয়।
উপজেলার যাত্রাগাছি দিঘীর পশ্চিমপাড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি বাড়ি পেয়েছেন আবুল কালাম- ছবিলা দম্পত্তি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে কেমন তার অনুভুতি এমন প্রশ্ন করলে হুহু করে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ আবুল কালাম। তিনি এই বাড়ি পেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করছেন বলেও জানালেন। শুধু আবুল কালামই নয় যাত্রাগাছি এই দিঘীর পাড়ে এমন আরো বারোটি পরিবারকে পূর্নবাসিত করা হয়েছে। তাদেরকে বাড়িও বুঝে দেওয়ার হয়েছে। শুধু মাড়িয়া ইউনিয়নই নয়। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে এমন আশ্রায়ন প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন শতশত ভুমিহীন পরিবার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, প্রথম ফেজে উপজেলার বারটি ইউনিয়নে ১৭৫ টি বাড়ি নির্মাণ করে তা অসহায় দুস্ত পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ফেজে আরো ৭৭ টি বাড়ি সহ মোট ২৫২টি বাড়ি নির্মাণ করে তা ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারের খাস জমিতে এসব বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ করতে সরকারের বরাদ্দ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। এই বাজেটেই আমরা চেষ্টা করছি মান সম্পন্ন ও টেকসই বাড়ি নির্মাণ করে দিতে। তবে অভিযোগ রয়েছে চলতি বর্ষা মৌসুমে বেশ কিছু আশ্রায়ন প্রকল্পের ঢালু নীচু এলাকায় পানি জমে দূর্ভোগে পড়েছেন অসহায় পরিবার। তবে এসব বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারন করেত সাথে সাথে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম আলী আসকান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বাড়ি উপহার পেয়ে সহায় সম্বলহীন মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। তার ইউনিয়নে যে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে তা স্বল্প বাজেট অনুযায়ী মোটামুটি মানসম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ জানান, প্রকৃত আশ্রয়হীনরাই এসব বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছে। তাদেরকে সঠিক ভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, ডিসি স্যারের নির্দেশনায় আমরা এই প্রকল্প সুন্দর ও সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য দিনরাত কাজ করেছি। নির্মানের পর বাড়িগুলো এখন পর্যন্ত টিকে আছে। কোথাও কোন সমস্যা হলে আমরা তা দ্রুত সারানোর চেষ্টা করছি।