মিমাংসার কথা বলে প্রতারণা চেয়ারম্যানের, আবারও উৎতপ্ত বাগমারার জোঁকা বিল- বাগমারা টাইমস
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা:
বাগমারার জোঁকা বিল নিয়ে বিবাদমান এক পক্ষের অনড় অবস্থানে আবারো উৎতপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকার ১০/১২ টি গ্রাম। তবে বিল এলাকার শান্তি প্রিয় শত শত কৃষক এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জোঁকা বিল মৎস চাষ প্রকল্পের সভাপতি মাষ্টার আব্দুর রশিদ এর শরনাপন্ন হলে তিনি মিমাংসার কথা বলে গ্রামবাসীদের সাথে বার বার প্রতারনা করে চলেছেন এমন অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এর আগে গ্রামবাসীরা একাধিকবার ছুটে আসেন বাগমারার ইউএনও’র কার্যালয়ে। সেখানে প্রকল্পের সভাপতি মাস্টার আব্দুর রশিদের অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার ভেস্তে যায় শান্তি স্থাপনের উদ্যোগ।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে ও বাগমারা ইউএনও’র কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোঁকা বিলের মাছ চাষ করা কে কেন্দ্র করে গঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনায় বর্তমানে বিবাদমান উভয় পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোন সময় ওই ঘটনায় জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। এতে প্রাণহানিরও আশংকা রয়েছে। ওই বিলের প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা অচিরেই বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবীও জানিয়েছেন।
গ্রামাবাসীরা জানান, বিল কমিটির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মাষ্টার খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। আগামী আগষ্ট মাসে ওই বিলে তার সভাপতির মেয়াদ শেষ। বিল সংলগ্ন ১০/১২ গ্রামের পঁচানব্বই ভাগ মানুষ আর তাকে চাচ্ছে না। তিনি বিলের টাকা লুটপাট করে পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন ক্যাডার বাহিনী ম্যানেজ করে সন্ত্রাসী স্টাইলে জোর পূর্বক বিলের নেতৃত্ব ধরে রাখতে চাইছেন। এই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য রশিদ মাস্টার একের পর এক ছলচাতুরীর আশ্রয় গ্রহর করে চলেছে। এর তিনি ওই বিলে তার লোকজন দিয়ে বিষ প্রয়োগ করে গ্রামাবাসীদের প্রতিপক্ষ করে মামলা দেন। তিনি এখানেই ক্ষান্ত হননি। সম্প্রতি তিনি নিজেই বিলে বানা (বাঁশের বেড়া) দিয়ে আবার তার লোকজন দিয়ে রাতের আধারে ওই বানা কেটে দিয়ে আবারও গ্রামবাসীর নামে মামলা দেন।
একের পর এক এসব ঘটনায় বিল কমিটির অন্য সদস্য সহ স্থানীয় জমির মালিকদের মধ্যে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চলমান সমস্যার সমাধানে একাধিক বৈঠকে হাজির না হয়ে সমস্যাকে আরো জটিল আকারে নিয়ে যাচ্ছে সভাপতি সহ তার অনুসারীরা। সেই সাথে সঠিক ভাবে বিলের হিসাব-নিকাশ প্রদান না করে প্রতিদিনই মাছ বিক্রয় করছে তারা। মাছ চাষ প্রকল্পের বেশ কয়েকজন সদস্য সহ জমির মালিকরা বলেন, কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ আমাদেরকে কোন টাকা পরিশোধ না করে নিজেই তার অনুসারীদের নিয়ে আত্মসাৎ করে চলেছে।
জোঁকা বিলের জমির মালিক কামরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, রহিদুল ইসলাম, কুবাদ আলী সহ অনেকে বলেন, তিন বছরে ৩০ বার বিলের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার কথা থাকলেও ৩ বছরে মাত্র ১১ বার টাকা সদস্যদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। বাকি টাকা নিজের কাছে রেখেছে। শুধু তাই নয় সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান হত্যা কান্ডের মামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে তার কাছে ৯ লাখ টাকা রেখে দিয়েছে। যে টাকা এখনও কাউকে দেয়া হয়নি। প্রতিবছর প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রয় হয় এই জোঁকা বিল থেকে। জমির মালিক সহ যাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের কাউকে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বিলের দখল নিজের কাছে রাখতে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিলের মেয়াদ শেষে হলেও টাকা পরিশোধ না করায় অনিশ্চিতায় মধ্যে পড়েছে জমির মালিক সহ স্থানীয় শত শত লোকজন। তারা পাওনা টাকা চাইতে গেলেই ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে সভাপতি সহ তার ক্যাডার বাহিনীর লোকজন। এ ঘটনায় থানা সহ আদালতেও মামলা মোকদ্দমাও করেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে মামলা করায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভুক্তভোগিরা। তারা নিরাপদে গ্রামে ফিরতে ও বাড়িতে অবস্থান করতেও ভয় পাচ্ছেন। সেখানে কারণে অকারণে চেয়ারম্যানের ক্যাডারবাহিনী ও ওই সব নিরীহ লোকজনের বাড়িতে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।
বর্তমানে জোঁকা বিল নিয়ে যে বিরোধ চলছে তা যে কোন সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষে আবার একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বিল এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন ।
জানা যায়, নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার আব্দুর রশিদকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ ৪২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটিতে সভাপতি তার নিজস্ব লোকজনকে রেখে যারা নেতৃত্ব দিতে পারবে এমন লোকজনকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে নিয়েই সভাপতি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। এতে করে ওই বিলের যারা বেশির ভাগ জমির মালিক তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়তে থাকে। বিলের জমির মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কোন সভা আহ্বান করেননি। সকল সদস্যদের মাঝে লভ্যাংশের টাকাও ভাগ করে দেননি। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কতিপয় সদস্যকে নিয়ে মাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হিসেব চাইতে গেলেই মামলা-হামলা ও প্রাণনাশের ভয় দেখানো হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। হাট-মাধনগর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার, বাবুল হোসেন, আতাউর রহমান, সাহেব আলীসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক ওই বিলের জমি মালিক এসব অভিযোগ করেন। কমিটির অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের বাড়িঘরে একাধিক বার হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ সব ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি কয়েকটি বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বাড়িঘর ভাংচুর করে। ওই দিন বাসুদেবপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখায় ও বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে বলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আরিফা বেগম ও জাহাঙ্গীরের মা সাহারা অভিযোগ করেন। হামলাকারীদের ভয়ে জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান তাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।