বাগমারায় আর্শিবাদের জলকপাট এখন অভিশাপ! বর্ষা কালের আগেই মেরামতের দাবী স্থানীয়দের
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স স্টাফ রিপোর্টারঃ
বন্যা নিয়ন্ত্রণে ও ফসল রক্ষায় রাজশাহীর বাগমারার কুচিয়ামারা খালের মুখে নির্মাণ করা জলকপাটটি এখন আর্শিবাদের পরিবর্তে হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলকপাটের কপাট ভাঙা থাকায় কৃষক ও চাষীরা আতঙ্কে রয়েছেন। বর্ষার আগে জলকপাটটি মেরামত করা না হলে আবারো শতকাটি টাকার ফসল ও বাড়িঘর ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
জলকপাটটি মেরামতের দাবি জানিয়ে এলাকার চারশতাধিক কৃষক পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত করেছেন। তবে এখনও সাড়া না মেলায় কৃষকদের আতঙ্ক কাটেনি।
সাইপাড়া-ভবানীগঞ্জ সড়কের বাগমারার গণিপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় কুচুয়ামারা খালের মুখে জলকপাটটি স্থাপন করা হয়। ফকিন্নি নদী থেকে খাল দিয়ে পানি সোনাবিলাসহ কয়েকটি বিলে প্রবেশ করে ও বেরিয়ে যায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ফসল রক্ষা ও চাষাবাদের সুবিধার জন্য পানি উন্নয়নবোর্ড জলকপাটটি নির্মাণ করে। এটি নির্মাণের ফলে বাসুপাড়া ও গণিপুর ইউনিয়নের সোনাবিলা, সোরাবিলাসহ কয়েকটি বিলের চাষাবাদে সুফল মেলে ও বন্যায় ফসল রক্ষা পায়। এছাড়াও চাষের সুবিধার জন্য খালে পানি ধরে রাখাও সম্ভব হয় জলকপাটের কারণে। দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার কৃষক এই জলকপাটের সুফল ভোগ করে আসছেন।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় জলকপাটের কপাট নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি কপাটগুলা অকেজো হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২৮ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে জলকপাটটি ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থা দেখা যায়। কপাটের উভয় পাশে টিনের পাত দিয়ে আটকানো রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের উদ্যাগে টিনের পাত দিয়ে আটকিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জলকপাটটি নষ্ট হওয়ার কারণ গেলো বন্যায় (২০২০ সাল) সোনাবিল, সোরাবিলা ও তার আশেপাশের কৃষকেরা ক্ষতির শিকার হন। কপাট নষ্ট থাকার কারণে সহজে নদী থেকে বন্যার পানি বিলে প্রবেশ করে। বন্যা প্রবেশের কারণে মাছ, পানবরজ, ধান, সবজি ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্যমতে, জলকপাট নষ্ট থাকায় গত বছরের বন্যায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাগমারা গ্রামের পানচাষি মজনুর রহমান জানান, জলকপাট নষ্ট থাকার কারণে গত বছরে বন্যার পানি বিলে ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানবরজসহ তাঁর প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গণিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, জলকপাটটি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে গত বছরের বন্যায় কপাট দিয়ে সরাসরি পানি বিলে প্রবেশ করে তাহির একডালা, বাগমারা, মাঝিগ্রাম, লাউপাড়া, শেখপাড়া, মোহাম্মদপুর, বালানগর, পোড়াকয়া, মাধবডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামের ফসলরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। জরুরী ভিত্তিতে জলকপাটটি সংস্কাররে দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সোবহান মন্ডল জানান, জলকপাটটি আর্শিবাদের পরিবর্তন এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার আগে সংস্কার করা না হলে অনেক চাষি হয়তো ধানচাষ করবেন না।
এদিকে বর্ষাকাল শুরুর আগে কৃষকদের মধ্যে জলকপাট নিয়ে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চারশতাধিক কৃষক এটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। স্থানীয় সাংসদ এনামুল হকের সুপারিশসহ আবদনপত্রটি গত মার্চ মাসে বিভিন্ন দপ্তরে পৌঁছানো হয়। তবে এখন পযর্ন্ত কোন সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে ) কৃষকেরা স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি জানান। তাঁরা এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন। কৃষকরা বলেন, বর্ষার আগে এটি সংস্কার করা না হলে আবারও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। সরকারি ভাবে সংস্কার করা না হলেও নিজেদের টাকায় তা ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এজন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছেন।
উপজলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, জলকপাটটি নষ্ট থাকায় ওই এলাকার কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষার আগে জলকপাটটি সংস্কার করা হলে চাষিরা কিছুটা আতঙ্কমুক্ত থাকতে ও নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করতে পারবেন। জলকপাটটি সংস্কাররে জন্য উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকারবার আলোচনা হয়েছে। পাউবো এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার বলে মতামত দেন।
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জলকপাট সংস্কারের বিষয়টি বগুড়া মেকানিক্যাল দপ্তর দেখভাল করে। আবেদনপত্রটি সেখানে পাঠানো হয়েছে। তারা এই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।