বাগমারায় খনন করা পুকুরের মাটি পড়ে দেড়শো কোটি টাকার সড়কের ক্ষতি -বাগমারা টাইমস
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স (স্টাফ রিপোর্টারঃ
সরকারি রাস্তার ক্ষতিসাধন করলে দুই বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে আইন-এ। এই বিধান উল্লেখ করে রাজশাহীর বাগমারায় পুকুর মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই উপজেলায় পুকুর খনন ও মাটি পরিবহণের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত সরকারি পাকা সড়ক নষ্ট হয়। আরও অনেক সড়ক হুমকির মুখে রয়েছে।
বাগমারা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় মাছ চাষের জন্য ব্যাপকভাবে পুকুর খনন চলছে। সরকারি সড়কের ধারে এসব পুকুর খননের কারণে সড়ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। আবার পুকুরের মাটি ইটভাটায় ও অন্যত্র ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহণের সময় মাটি পড়ে রাস্তার বিটুমিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে কার্পটিং উঠে যাচ্ছে। যার ফলে এলাকার জনগণের চলাচল বিঘ্ন ঘটেছে। ‘দ্য বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন অ্যাক্ট’ ১৫২ এর ৩ ও ১২ ধারা মোতাবেক এ কাজ দন্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে দুই বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয় রাস্তার ক্ষতিরোধ সতর্ক করতে স্থানীয় সরকার প্রশাসক অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাটি পরিবহণও বন্ধ হয়নি, কারও শাস্তিও হয়নি।
বাগমারায় এলজিইডির হিসাব অনুযায়ী, পুকুর খনন ও মাটি পরিবহণের কারণে এই উপজলায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। আর ৭০ কিলোমিটার রাস্তা এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। আরও অনেক সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। বাগমারা উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় নির্মাণ করা রাস্তাগুলো সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাস্তার গুলো আগামী তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত সংস্কার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।
খনন কৃত পুকুরের মাটি পরিবহণের কারণে এখনই রাস্তারগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব পুকুর মালিকদের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়া ছাড়া তারা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা জবাবে বলেছেন, তারা প্রতিদিন পানি দিয়ে রাস্তায় পড়া মাটি ধূয়ে পরিষ্কার করে রাখছেন। কিন্তু কোথায়ও সরেজমিনে তা দেখা যায়নি।
সম্প্রতি গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, আউচপাড়া, শুভডাঙ্গা, বাসুপাড়া, গণিপুর, গোয়ালকান্দি, মাড়িয়া, হামিরকুৎসা, ঝিকরা ও বড় বিহানালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা এবং উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রীতিমতো পুকুর খননের মহৎসব চলছে। চারদিক থেকে পুকুরের মাটি নিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। ওইসব এলাকার পাকা রাস্তাগুলো একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। একটি মোটরসাইকেল যে পরিমাণে ধূলা উড়াচ্ছে তাতে পথচারীদের দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা দেখা দিয়েছে। আবার একটু বৃষ্টি হলেই এসব ধূলামাটি কাঁদামাটিতে পরিণত হয়ে বাড়ছে দূর্ঘটনা। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, এবার এই উপজেলায় যে পরিমাণ পুকুর খনন হয়েছে বিগত দশ বছরেও তা হয়নি। মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে এ উপজেলায় প্রায় চার শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে।
কামনগর এলাকার কলেজ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, হাটবাইগাছা এলাকার দু’টি ইটভাটায় ট্রাক্টরযোগে পুকুর খননের মাটি পরিবহণের কারণে হাটবাইগাছা থেকে বসরাপুর মোড় হয়ে শ্রীপুর রামনগর ডিগ্রি কলজ পর্যন্ত পাকা সড়কটি বর্তমান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঝিকরা ইউপি’র চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ ফৌজদার ও ইউপি সদস্য মানিক প্রামানিক জানান, বৈলসিংহ সংলগ্ন কিশমত বিহানালী বিল দিঘি খননের মাটি তক্তপাড়া ইটভাটায় পরিবহণের কারণে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ পৌরসভার তক্তপাড়া থেকে বৈলসিংহ বাজার পর্যন্ত পাকা সড়ক ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একইভাবে খনন করা পুকুরের মাটি ট্রাক্টর থেকে পড়ে হাটগাঙ্গোপাড়া থেকে হাটদামনাশ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার, গোবিন্দপাড়া জিল্লুর মোড় থেকে বাঁধের হাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার এবং ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন মোড় থেকে দরগা-মাড়িয়া মোড় পর্যন্ত ৪ কিলামিটার পাকা সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আরও প্রায় ৫০ কিলামিটার পাকা সড়ক একবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকার কারণ এ এলাকায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের মহাৎসব চলছে এবং খনন করা পুকুরর মাটি পড়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় নির্মাণ করা সরকারি পাকা রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন, বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, এর আগে এসব মাটি বহনকারী ট্রাকের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কয়েকদফা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।