বাগমারায় কৃষি জমিতে ফসলের পরিবর্তে মাছ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা -বাগমারা টাইমস
নিজস্ব প্রতিবেদক বাগমরা টাইমসঃ
জমিতে ফসলের পরিবর্তে পুকুর কেটে মাছ চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন রাজশাহী বাগমারার অনেক কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বড় বড় পুকুর খনন করতে দেখা যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ এতে সহযোগিতা করলেও কৃষি বিভাগ খাদ্য উৎপাদন ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রবিউল করিম জানান, ধান উৎপাদন থেকে মাছ চাষে অধিক লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ধান বাদ দিয়ে মাছ চাষে এগিয়ে আসছেন। আগে যে জমিতে ধান চাষ হতো এখন তারা সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। ধান চাষ করে যে লাভ হয় মাছ চাষে তার থেকে দুইগুণ পর্যন্ত বেশি লাভ হয় বলে জানান মৎস্য চাষীরা
তিনি বলেন, এটা কৃষির সাথে বিরোধ নয়, মাছ চাষ কৃষির-ই একটি অংশ। আমি উপজেলা ও ইউনিয়ন সকল মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
এভাবে আবাদি জমি কমতে থাকলে উপজেলায় খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তবে কৃষকরা দেখছেন নগদ লাভের দিকটা।
তবে সাধারণ জনগন মনে করেন নির্দিষ্ট আইন না থাকায় অধিক পরিমাণে মাছ চাষ করে কৃষিজমি ধ্বংস করা হচ্ছে।
বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা গ্রামের মৎস্য চাষী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ছয় বছর আগে কৃষিকাজ করতাম। ধান চাষে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাছাড়া ধান আবাদে যে খরচ হয়, বাজার দরে তাতে লাভ তো দূরের কথা, চালানই ওঠে না। তাই আমি মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছি।
বর্তমানে তিনি ৬০ একর জমির পুকুরে মাছ চাষ করে বছরে খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকা লাভ পাচ্ছেন বলে জানান।
উপজেলার যুগিপাড়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ঐ গ্রামের বাসিন্দা চপল মোল্লা ও হালিম মোল্লাসহ ১১ জন মিলে ১১০ বিঘা জমি নিয়ে একটি বিশাল দিঘি খনন করে সেখানে মাছের খামার করছেন। এ জমিতে গত মৌসুমেও বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। গত ছয়-সাত বছর ধরে ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে তারা তেমন লাভ পাননি বলে জানান।
উপজেলার বাজে-গোয়ালকান্দি গ্রামের ময়না হোসেনও একই কথা বলেন, কিন্তু বর্তমানে দুই একর জমিতে মাছ চাষে প্রতিবছর দুই লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলে তিনি জানান।
‘ধানের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি, তাই সমবায়ের ভিত্তিতে আমি আরও ২০ একর জমিতে মাছ চাষের চিন্তা করছি’
যশেরবিল এলাকার কৃষক আলিমুদ্দিন ছয় একর জমিতে ধান চাষ করে কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রায় লাখ টাকা করে লোকসান হচ্ছিল। বর্তমানে ওই জমিতে মাছের ঘের করে ভাল লাভ পাচ্ছি। তিনি আরও জমিতে মাছ চাষের চিন্তা করছেন বলে জানান।
উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের ফসলি জমিতে বড় বড় পুকুর খনন করা হচ্ছে, এ চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোয়ালকান্দি, হামিরকুৎসা, যুগিপাড়া, শ্রীপুর, আউচপাড়া, সোনাডাঙ্গা ও নরদাস ইউনিয়নে। তবে উপজেলার দুই পৌরসভা তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ-এ পরিমাণ তুলনামূলক কম মনে হয়েছে।
উপজেলার কৃষিজমির পরিমাণ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান জানান, গত ১০ বছরে বাগমারায় মাছ চাষের কারণে প্রায় ৫ শত হেক্টর ফসলি জমি কমে গেছে। ২০০৫ সালে এ জেলায় ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার হেক্টর। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৭ হাজার হেক্টরে। ২০২০ সালে আরও তিন হাজার হেক্টর কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার হেক্টরে।