বাগমারায় অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি
মোহাম্মদ আলী তোহা বাগমারা টাইমসঃ
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেক সময় সরকারি মহল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হলেও, কার্যত এখন পর্যন্ত সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এই টানা-পড়া অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাগমারা উপজেলায় বসবাসরত স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
বাগমারা টাইমসকে এমনটাই জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী তারেক রহমান বলেন, গতবছরের ১৭ মার্চ থেকে বাসায় অবস্থান করছি, ক্যাম্পাস লাইফ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাচ্ছি সেই সাথে পড়াশোনার প্রতি অনিহা কাজ করছে , পড়াশুনোয় মনোযোগ দিতে পারছিনা। ক্যাম্পাসের ফেলে আসা বন্ধু-বান্ধব ও বিভিন্ন সুখকর স্মৃতিগুলোই এখন একমাত্র সম্বল।
করোনার বিষাক্ত ছোবল গ্রাস করেছে একাডেমিক সেমিস্টার। এতো দিনে আমার চতুর্থ বর্ষে থাকবার কথা অথচ আমাদের তৃতীয় বর্ষের দুইটি সেমিস্টার ফাইনাল দেয়া এখনো বাঁকী, কবে চতুর্থ বর্ষে উঠবো আর কবে অনার্স শেষ করবো সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার ইয়ারমেটরা এখন আমাদের সিনিয়র। আমি মনে করি এর পেছনে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসি দায়ী। অনলাইনে ক্লাসের পর যখন আমরা এক্সাম দিতে প্রস্তত তখন বিভিন্ন তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতৃপক্ষ।
যেখানে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকাণ্ড চালু রেখেছে সেখানে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করছেন তাঁরা।
অবিলম্বে ক্যাম্পাস না খুললে যে এই প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে এটা বলাই বাহুল্য। অতি দ্রুত নিয়মনীতি নির্ধারণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হোক।
বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আলী তোহা বলেন, অফিস-আদালত ব্যাংক, গার্মেন্টস, শিল্প-কারখানা, বাজার-ঘাট, শপিংমল সবকিছুই খোলা থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? সরকার কি আসলেই করোনা ভীতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাইনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ইস্যু রয়েছে?দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়েছি। যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চলছে তবে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ফলপ্রসূভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই অনলাইন ক্লাসের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে অনলাইন ক্লাস নামক প্রহসন বন্ধ চাই।একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পরিবারের ওপর কতটা চাপ হয়ে রয়েছি, দীর্ঘদিন ধরে বাসায় থেকে সেটা অনুভব করতে পারছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবগণকে দীর্ঘশ্বাস নেয়ার সুযোগ দিন।
চুয়েট শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পুরো সময়টা ঘরে বসেই কাটছে। খুব কাছ থেকেই দেখছি বাবার বয়স হয়েছে, কত কষ্ট করছেন এই বয়সেও। বুক ভরা স্বপ্ন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রি অর্জন করে ভালো চাকরি করবে। দেশের এই মহামারি কোভিট-১৯ অবস্থায় সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়ছেন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি আর তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক ডিফ্লেশনে ভুগে সুইসাইড এর মত পথে ধাপিত হচ্ছে।দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান থেকে দূরে থাকায় তাদের মানসিকতারও অনেক বড় পরিবর্তন ঘটছে।
অনেকে মাদক আসক্ত হয়ে পড়ছে, অনেকে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। আর এই দেশে বাল্যবিবাহ এর মত ঘটনা তো আছেই। এই ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৩০% ছেলে মেয়েরা তাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, অনেকে হতাশায় ভুগছে। তাই সবার কথা চিন্তা করে সরকার এর কাছে আবেদন করছি অতি দ্রুত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক।
ঢাবি শিক্ষার্থী আহসান হাবীব বলেন, দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অনলাইন ক্লাসের ওসিলায় অল্প বয়সের ছেলেমেয়েরা হাতে পেয়েছে স্মার্ট ফোন।স্মার্টফোনের কারণে বিভিন্ন অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে বিকৃতমনা হয়ে পড়ছে তারা, বিভিন্ন সামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে তারা। শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখতে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক।
যবিপ্রবির শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনায় বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। ৩০ মে পর পর্যায়ক্রমে সবকিছু খুলে দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কথা হয়তো সত্য যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশে করোনা সংক্রমণের হার একটু হলেও কমছে কিন্তু আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখবো যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে সব কিছু খোলা থাকছে আমাদের, শিল্প কারখানা, মার্কেটএবং অন্যান্য দোকানপাট, ফলে আমরা সব জায়গায় যাচ্ছি, ভীড় জমাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি না আমরা, সব জায়গাতে তো যাচ্ছি, সুতরাং সব জায়গাতে আমরা যদি যেতে পারি তাহলে কেন আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবো না? আর করোনা যে সহজে যাবে না তা আমরা সবাই জেনে গেছি তাহলে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ থাকবে?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে সব কিছু খোলা থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেনো বন্ধ থাকবে? পুরো এক বছরের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি আমাদের তেমন ভাবিয়ে তুলেছে বলে মনে হচ্ছে না কি? এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা একসময় মেধাশূন্য হয়ে যাবে, বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। আজকের শিক্ষার্থীরা ই তো আগামী দেশটাকে নেতৃত্ব দিবে তাই নয় কি? শিক্ষার্থীদের মানসিক বিষয় বিবেচনায় দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। জবি জাবি শিক্ষার্থী ফরহান সাকিব বলেন, সুষ্ঠু মেধার বিকাশে যেকোনো মূল্যে অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা চাই।