বাগমারায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালকুর- বাগমারা টাইমস
নিজস্ব প্রতিবেদক,বাগমারা টাইমসঃ
চলছে মধুমাস, এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী রসালো ফল তালের শাঁস। তাল ফলের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালকুর’ নামে বেশি পরিচিত। প্রচণ্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।
বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমি ফল তালের শাঁস বিক্রির বেড়ে গেছে। অনেক মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল পাইকারি কিনে এনে কেটে কেটে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করেন। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস থেকে রস বাহির করে চলে পিঠা উৎসব।
‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ।
ঐ খানেতে বাস করে, কানা বগীর ছা।’ গাঁয়ে এখন বগের ছানা থাক বা না থাক, বাগমারার প্রতিটি ইউনিয়নে তালগাছগুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। মধুমাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আটি।
গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। তাই জৈষ্ঠ্যের এ মধুমাসে বাজারে নানা ফল উঠলেও বাগমারায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে তালের শাঁস। গ্রীষ্মের এই দিনে তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হয়ে উঠেছে। তাই সবার প্রিয় কঁচি তালের শাঁস।
গত ২১ মে, (শুক্রবার) বিকেলে তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তালের শাঁস বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। শিশুসহ সব বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে।
বাগমারা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুর রহমান বলেন, তাল গাছের কোনো পরিসংখ্যান জানা নেই।
বাগমারা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.শরিফ আহম্মেদ বলেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে বাগমারার সড়ক গুলোতে বেশি বেশি তাল গাছ রোপণ করতে হবে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও বাসস্ট্যান্ড-এ তালের শাঁস বিক্রি করে অনেক হতদরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাটে তাল শাঁস বিক্রেতা শরীফ আহম্মেদ জানান, তিনি প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন। তবে গাছ ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর।
জৈষ্ঠ্য থেকে আসারের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ৪ থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে চারজনের সংসার ভালই চলছে।
উপজেলার গোয়ালকান্দী গ্রামের ক্রেতা মো. শাহজাহান আলী, শাহা-আলম ও আসলামউদ্দিন জানান, তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেয়ে ভালই লাগে মনটা জুড়িয়ে যায়। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দুই ধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।
কালের বিবর্তনে বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ শখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ বপন করতো, কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।
ক্রেতা মেহেদী হাসান আতিক বলেন, প্রায়ই বাড়িতে খাওয়ার জন্য এই তালের শাঁস কিনে নিয়ে যাই। মধুমাসের অন্যান্য ফলের তুলনায় এই শাঁস পরিবারের সব সদস্যদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এটি নরম ও সুস্বাদু। সব বয়সের মানুষ এটি সহজে খেতে পারে। তুলনামূলকভাবে এর দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই শাঁস বেশি দিন পাওয়া যায় না। তবে দিন দিন এই শাঁসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বাগমারার তাহেরপুরের রয়েল আল্ট্রাসাউন্ড হাসপাতালে ডা. এম এ আবদুল মালেক বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে।
এছাড়া, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন- সি, এ, বি, সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।