সর্বশেষ খবর

শুভ জন্মদিন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি-বাগমারা টাইমস

 




মোঃ সারোয়ার  হোসেন স্বাধীন, স্টাফ  রিপোর্টারঃ

আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে পৃথিবীর বুকে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছিলো ফুটবল খেলা। সময়ের পরিক্রমায় গোলাকৃতির বলটি পায়ে নিয়ে পুরো বিশ্ব মাতিয়েছেন নামীদামী অনেক তারকা খেলোয়াড়। তবে খুব কম খেলোয়াড় আছেন যারা সুন্দর খেলা ও মার্জিত ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করে রেখেছেন। এই খুব কমের মধ্যে সেরা হলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচিত্তিনি। যিনি তার অসাধারণ সুন্দর, জাদুকরী খেলা দিয়ে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছেন গোটা ফুটবল বিশ্বকে। বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা এই ফুটবলারের জন্মদিন আজ।


১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন মেসি। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ছিলেন একটি ইস্পাত কারখানার শ্রমিক। মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তার পৈতৃক পরিবারের আদি নিবাস ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় এসে বসতি গাঁড়েন। মেসির রয়েছে দুই বড় ভাই এবং এক ছোট বোন।



মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। মেসির প্রথম কোচ তার বাবা হোর্হে। এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলা শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট আগ্রহ দেখালেও সেসময় ক্লাবটি মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতি মাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।


বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। ফলে বার্সালোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন তিনি। তাররপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। এরপর থেকে বাকিটা কেবল মেসি, মেসি এবং মেসি।



 মেসি তার পুরো পেশাদার জীবন পার করেছেন বার্সেলোনায় যেখানে মোট ৩৫টি শিরোপা জিতেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ এবং ৭টি কোপা দেল রে-র শিরোপা।


একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল (৪৭৪), লা লিগায় এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৫০), ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩), এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোল (৯১), এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল (২৬) এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের (৮) রেকর্ড। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও সেরা। তিনি লা লিগা (২১৭) এবং কোপা আমেরিকার (১৩) ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলে সহায়তাকারীর রেকর্ডেরও মালিক।


মেসি আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে মেসি আর্জেন্টিনাকে ২০০৫ ফিফা ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে সাহায্য করেন যে টুর্নামেন্টে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলম্পিকে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন।


২০০৫ সালের আগস্টে জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক হয়। ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার অধিনায়কত্ব পান তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনাকে টানা তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে তোলেন: ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০১৫ কোপা আমেরিকা এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকা। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৯ কোপা আমেরিকায় সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নেয় মেসির দল। তিনি ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।


বর্তমানে মেসি জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জয়ের আরও একটি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অনেকবার তিনি বলেছেন কতটা মরিয়া দেশকে একটি শিরোপা এনে দিতে। এমনকি নিজের বর্ষসেরার খেতাবও বিসর্জন দিয়ে হলেও দেশের জার্সিতে কিছু একটা জিততে চাওয়ার আকুতিও প্রকাশ করেছেন অকপটে।


মেসির সেই ইচ্ছা আদৌ পূরণ হবে কি না সেটা সময়ের হাতেই তুলে রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। যদি মেসির হাতে ওঠে কোপা বা বিশ্বকাপের শিরোপা তাহলে সেটা শুধু মেসিই না গোটা ফুটবল দুনিয়ার জন্যই মহোৎসবে পরিণত হবে এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।


ফুটবলের এই মহানায়কের জন্মদিনে আমাদের স্পোর্টস জোন ২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং শুভ কামনা।