সর্বশেষ খবর

বাগমারার গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, রোগিকে ভর্তি না করে দেওয়া হয় ফিরিয়ে


মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারাঃ 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাগামার গ্রামাঞ্চলে আছড়ে পড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদাসীন সাধারণ লোকজন। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে সাধারন লোকজন জ্বর সহ সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলেও ভয়ে করোনা টেস্ট করতে আসছেন না অনেকে। এতে করে করোনা সংক্রামন বেড়ে যাওয়ার আশংঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের অব্যবস্থাপনা, বিশ্রী নোংরা পরিবেশ ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণেও সেখানে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগিরা যেতে ও চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। 


রাজশাহীর বৃহত্তম উপজেলা বাগামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জি এনামুল হকের প্রচেষ্টায় ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পালস, অক্রিমিটার ও অক্রিজেন সহ করোনা পরীক্ষার কীট সহ আনুসাঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও এই হাসপাতাল মুখী হতে রোগিদের অনীহার কারণটি রহস্যজনক। অথচ এই হাসপাতালের ৪ কি:মি: দূরে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে একের পর এক ব্যাঙ্রে ছাতার মত গজিয়ে উঠছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে গলাকাটা ফি দিয়ে রোগিরা চিকিৎসা নিলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাম মাত্র মূল্যে এমনকি বিনামূল্যেও চিকিৎসা নিতে যায় না সাধারন রোগিরা। এখানে নানা রকম অব্যবস্থাপনা ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণে তারাই রোগিদের ওইসব নামসর্বস্ব ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করে থাকে। 


গতকাল, বুধবার (৩০ জুন) বেলা এগারোটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ সরেজমিন ঘুরে সেখানে অবস্থানরত রোগি তাদের স্বজন ও কর্মরত ডাক্তারদের সাথে কথা বলে এমন ভয়াবহ চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে। 


বৃহৎ এই উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ জন রোগি মারা যাচ্ছে এবং গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সর্দি জ্বর কাশি সহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত শতাধিক ছড়িয়ে পড়লেও ২৫ শয্যার বাগমারা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগি ভর্তি রয়েছে মাত্র ৮ জন। এই ৮ জনের মধ্যে ৩ জনের করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: গোলাম রাব্বানী। তিনি আরো জানান, আমরা করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগিদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করেছি এবং করোনা পজিটিভ হলে তাদেরকে রাখার ব্যবস্থা সহ যেসব রোগিদের অবস্থা ক্রিটিক্যিাল তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা থাকলেও রোগিরা হাসপাতাল মুখি না হওয়ায় আমাদের সে সব বেড ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তবে এর আগে এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগি পালিয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে তোলপাড়া শুরু হয়। এ নিয়ে একটি অনলাইনে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। মূলত করোনা ওয়ার্ড সহ সাধারণ ওয়ার্ডের চরম অব্যবস্থাপনা, ময়লা নোংরা পরিবেশ খাবারের মান অতি নিম্ন এবং বিছানা বালিস অতি নোংরা এবং সেগুলো দিয়ে দূর্গন্ধ বের হওয়ার কারণে এই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ সহ অন্যান্য রোগিরা আসলেও তারা একদিনেই অতিষ্ঠ হয়ে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হয়। 


এখানকার করোনা ওয়ার্ডের একই অবস্থা। সেখানে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ওয়ার্ড থেকে। অথচ এই করোনা ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুসজ্জিত ও আধুনিক মানসম্পন্ন করার জন্য সরকারি তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসলেও সেখানে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ভিন্ন মত পোষণ করে বলেছেন এই বরাদ্দ শুধু করোনা ওয়ার্ডের জন্যই নয় এই বরাদ্দ থেকে করোনার সেম্পল আনা নেওয়া, রোগিদের চিকিৎসা, ডাক্তার ও নার্সদের ওভারটাইম সম্মানী সহ হোটেলের খাওয়া খরচ সহ অনুসাঙ্গিক খাতে খরচ করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম বা অর্থের অপচয় করা হয়নি। 


অভিযোগ রয়েছে এখানে করোনা রোগিরা আসলে তাদেরকে ভর্তি না নিয়ে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। পরে রোগির স্বজনরা অপেক্ষায় থেকে থেকে কোন উপায় অন্তর না পেয়ে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন। বুধবার, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে এই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসেন ভবানীগঞ্জ পৌরসভার দানগাছি মহল্লার আবুল কাসেম (৭০)। তিনি ভয়ানক শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসলেও তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে জানান তার দুই ছেলে সালাম ও শামীম। পরে তারা তাদেরকে পিতাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে করোনা সহ শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অথচ এই হাসপাতালেই অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে ২৫ টি অক্রিজেনের সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডার রেখেই শ্বাসকষ্টের রোগি ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবুল কাসেমকে ফিরিয়ে দেওয়া হল যা অমানবিকতারই পরিচয়। 



আদৌ কি এই হাসপাতালে করোনার রোগিরা চিকিৎসা পচ্ছেন না কি চিকিৎসার নামে তারা কেবলই হয়রানী ও প্রতারনার শিকার হচ্ছেন এই প্রশ্ন আজ ঘুরে ফিরে আসছে রোগি ও তাদের স্বজনদের মনে। এখানে করোনা রোগিদেরে কি চিকিৎসা দিচ্ছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে টিএইচও ডা: গোলাম রাব্বানী বলেন , এটা সাধারনত আমরা প্রকাশ করি না। করোনার যেসব উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বর গলা ব্যাথা জিহবায় স্বাদ না থাকা সহ বিভিন্ন উপসর্গের ধরন ও মাত্রা বুঝে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আবাসিক চিকিৎিসক ডা: নাসির উদ্দিন জানান, আমরা চাই রোগিরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক এবং হাসপাতাল ছেড়ে যাক। 


হাসপাতালটির পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সহ থাবার দাবার চিকিৎসা সেবার মান নিম্নগামি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি সহ একজন আবাসিক চিকিৎসক দুই জন কনসালটেন্ট ও আটজন মেডিকেল অফিসার সহ মোট ১২ জন কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে ২০ জন নার্স থাকলেও ৪জনকে রাজশাহী মেডিকেল কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে। এই স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার ও নার্স দিয়ে বিশাল এই জনগোষ্টিকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে আমরা সদা সচেষ্ট রয়েছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এখানে করোনা নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। লোকজন করোনা টেষ্ট করতে আগ্রহী নয়। এছাড়া এখানে টিকার পারসেনন্টেজও খুব কম। গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম টিকা প্রদান কর্মসূচী শুরু করার পর প্রথম ডোজ ১০ হাজার ৪শ ৪৬ জন এবং ২য় ডোজ ৪ হাজার ৮শত ৩৩ জনকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।