সর্বশেষ খবর

অগণতান্ত্রিক বিএমটিএ ও নেতৃত্ব সংকট, লিখেছেন সাকিব বাপ্পি-বাগমারা টাইমস

 


স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা টাইমস:

সে দিন যদি বুঝতে পারতাম মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশায় এতো ভয়াবহ অবস্থা তাহলে হয়তো মহামান্বিত এই পেশায় পদার্পণ করা হতো না। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয় তাই এখানে কিছুটা থেমে যেতে হয়, একজন নবাগত হিসেবে পেশার রাজনীতির এই করুণ অবস্থা দেখে আশাহত না হয়ে উপায় নেই। আশা করি কেউ দ্বিমত হবেন না যে, এই দুরবস্থা কিংবা বিশৃঙ্খলা একদিনে সৃষ্টি হয়নি তেমনি এর পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ দায়ী।


এই নেতৃত্ব শূন্যতায় ধুঁকতে থাকা বিএমটিএ তার প্রভাব একজন সাধারন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসাবে আমার উপরও এসে পড়েছে। কেন্দ্রীয় বিএমটিএ এর নির্বাচন না হওয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বেকার কিংবা প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত সাধারণ টেকনোলজিস্টদের আশা-ভরসা অনেক আগেই সমাহিত হয়ে আছে। কোন বিষয়ে নেতৃত্বে স্থানীয় কারো সাথে আলাপ করতে গেলেই বুলবুলি ময়না পাখির মতো নিজের গুণকীর্তন শুরু করে দেয় তার কাছে যেমন খুবই গৌরবের এবং সমসাময়িক উত্তেজনা তৈরি বটে কিন্তু আমার কাছে তা হতাশা ও বিদ্রুপের।


মাঠের আন্দোলনকে শুধু বড় করে দেখার কিছু নেই। মাঠের আন্দোলনে নামার আগে সৈনিকদের প্রস্তুত করাটাই আসল। যে জাতির ভিতরে বিগত ১০ বছরে একজন বলিয়ান ও কর্মনিষ্ঠ নেতা তৈরি হয়নি সে জাতিকে আন্দোলনের মাঠে নিলে সাধারণ টেকনোলজিষ্টদের সাথে ঠাট্টা তামাশা ছাড়া আর কি বা হতে পারে। মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে দুধ কলা খাইয়ে স্বাস্থ্যবান করাটা আমাদের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই না।


নিজের বুলি আওরানো নেতা যখন বলবে পেশার জন্যে তুমি কি করছো ঠিক তখনই তার গোলাপী ঠোঁট খানা চেপে রেখে বলতে ইচ্ছে করে তাহলে আপনাকে কেন পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে? আপনার কাছে তাহলে আমাদের প্রত্যাশাই বা কি? আমাদের কাজ করতে দেবার ন্যূনতম যে গণতান্ত্রিক অধিকার তাকে আঁকড়ে ধরে আছেন কেন?


রাজনীতিতে রাজনীতির চর্চা, গণতন্ত্রের চর্চা বন্ধ হয়ে গেলে ক্রমাগত পেশা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। ২০২১ সালে এসেও আমাদের মুরুব্বী পদলোভী নেতারা জাগ্রত হয়নি। সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত বিএমটিএ দিয়েই এই পেশাকে যে আধুনিক এবং প্রত্যাশিত করা যায় তা বুঝতে উচ্চশিক্ষিত কিংবা পিএইচডি করার প্রয়োজন নেই। মায়ের আঁচল ধরে থাকা শিশুও হয়তো বুঝতে পারবে। নিদারুন সত্য যে অধিকাংশ তরুণরা পদের প্রতি আকৃষ্ট, কয়েক বছর ধরে অগণতান্ত্রিক বিএমটিএ যে স্বৈরাচারী শাসন করে আসছে তাদের ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। পদলোভী নেতারা হয়তো এখন বুঝতে পারে নি তারা বুঝতে না পারলেও এটা সত্য যে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। এই নেতৃত্ব সংকট ও অগণতান্ত্রিক চর্চা হয়তো বেশি দিন থাকবে না কিন্তু ইতিহাসে তারা কাপুরুষ হিসেবে থেকে যাবে। সাধারণ টেকনোলজিস্টদের চোখে তাকিয়ে তাদের সামান্য অবদান ও প্রত্যাশার কথা ইদানিং ছুঁড়ে ফেলতে শুরু করেছে সাধারণ মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। গণতান্ত্রিক চর্চায় ফিরতে হয়তো আমাদের মত তরুণদের সময় লাগবে কিন্তু পেশাগত বিপ্লব যে আসন্ন তা আমি আঁচ করতে পারি। বিপ্লব মানে ধ্বংশ নয় বিপ্লব মানে কাঠামোগত পরিবর্তন তা আমাদের বুঝতে হবে।


কত গুলো জায়গা আমাদের অবশ্যই এক থাকতে হবে, সংগঠনে গণতান্ত্রিক চর্চা, পেশাগত মান উন্নয়ন, পেশাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিকুলামের মানোন্নয়ন, পারস্পরিক সহমর্মিতা শ্রদ্ধাবোধ, একতা এবং রাজনীতি সচেতন।


আমার ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার বলি, সারাদিন যা কিছুই করি বেলা শেষে আমার ভাবনা পেশার মুক্তিতে এসে থামে। এভাবে একটা পেশার সংগঠন চলতে পারে না। একটা আইএইচটির সাথে অন্য একটা আইএইচটির কোন যোগাযোগ নেই। বেসরকারি আইএইচটি গুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। তারা শুধু ভাগের বেলায় উপস্থিত।


খেয়াল করে দেখবেন মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। এই নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। টেকনোলজি প্রতিদিন আপডেট হবে এটাই তো স্বাভাবিক। পাশ করার পর নবাগতদের পুরো জিনিসটাকেই আবার নতুন করে শিখতে হয়। এই কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ কে করবে? তাদের সৎ পরামর্শ কিংবা দিক-নির্দেশনা দেওয়ার মত একজন মুরুব্বী কি আছে? আর হ্যাঁ যদি থাকতোই তবে এই কারিকুলাম ১০ বছর আগে পরিবর্তন হতো।


আমার এই লেখা অনন্ত কাল ধরে থাকবে, সেহেতু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করলে ভুল হবে না। পেশাগত শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা না হলে বিএমটিএ কে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আনা না গেলে, পেশার মানোন্নয়নে ছাত্র ও তরুণদের কাজ করতে না দিলে কস্মিনকালেও এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। জানি বেতন গানিতিক হারে কিছুটা বাড়ছে অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে সমসাময়িক অর্থনীতির দিকেও তাকাতে হবে। কোন পেশায় কি রকম বেতন কাঠামো তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করলে কি সময়ের অপচয় হবে? দেশের বেকারত্বের চাপে হয়তো এই পেশা দখল হয়ে যাবে। তখন আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। বিএমটিএ এর উদ্দেশ্য কি কেবল পেশার উন্নয়ন করা? আমাদের মহান এই পেশা থেকে এই কথা বলা নীতি অযোগ্যতার হবে কেন না মেডিকেল টেকনোলজি সুবিধাগুলো জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা, যদি আপনি দেশপ্রমিক হন তবে এখন আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আমরাই সেকালেই পড়ে থাকি তবে তা তো হবে না এটা পুরো বোকামি তাহলে আমরা নিজেদেরকে সঠিক উপস্থাপন করতে পারবো না।


আমাদের মানদণ্ড বিবেচনা করা হয় ইন্সটিটিউট থেকে নবাগতরা কেমন শিখে আসলে তার উপর। আর সঠিকভাবে উপস্থাপন না করলে কারো কাছ থেকে মূল্যায়ন আশা করা যায় না। এখানে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আমি আপনি কেন পিছিয়ে, আমাদের মূল্যায়ন দিন দিন কমছে কেন? বিগত বিএমটিএ কয়টি সেমিনার, সভা কিংবা কর্মশালা আয়োজন করেছে? কি যা তা লিখছি এদের নিজস্ব একটা কার্যালয় খুঁজে পাওয়াই মুশকিল, আমি জানি না আছে কিনা থাকলেও তার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। আমার ধারণা কেবল শুধুমাত্র নিয়োগ আমাদের অস্তিত্বের ঠিকাদার হতে পারে না, এই নিয়ে তর্ক করা যায় তবে তা অযথা এবং সময় নষ্ট ছাড়া নেহাত কিছু হবে না।


আমাদের তরুণদের ভাবতে হবে আমরা প্রস্তুত কি না, এই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সময় লাগবে, জেলায় জেলায় কমিটি করতে হবে প্রতিটি আইএইচটিকে সমন্বয় করে রূপরেখা তৈরি করতে হবে। তাহলেই কেবল একটা গণতান্ত্রিক বিএমটিএ গঠন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে বাঁধা-বিপত্তি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বর্তমান নেতৃত্বে ভণ্ডামি এবং কাপুরুষতার চেয়ে ভয়ানক অস্ত্র আর দ্বিতীয়টি নেই।


মনে রাখতে হবে আমরা তরুণরা বিএমটিএ'র নেতৃত্বে আসলে কাঠামো বুঝতে হয়তো সময় লাগবে যেহেতু বিএমটিএ তে বহু বছর যাবৎ রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করে রেখেছে, তবুও মুক্তি আসবে কিন্তু এই অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব সাথে আজীবন সংসার করে মুক্তির স্বাদ পাওয়া যাবে না।


একটা কথা বলে রাখা ভালো আমাদের বর্তমান নেতৃত্বের গুনগান লিখতে বসলে হয়তো আরো দু-চারটে পৃষ্ঠা বেশি লেখা যেত, তাদের সান্নিধ্য পাওয়া যেত, কিন্তু পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজটা পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।


এই লেখাটা তার প্রমাণ হিসেবে থাকুক। পরবর্তী প্রজন্ম জানুক আপনাদের অগণতান্ত্রিক চর্চা আমাদের হতাশার একেকটা দীর্ঘ রজনী।


পেশাগত রাজনৈতিক চর্চা না থাকলে আপনি আমি মূল্যায়ন পাবো না এটা সত্য এটাই সার্বজনীন নীতি। একটা চিরস্থায়ী নির্বাচন পদ্ধতি করার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।


এই নিয়ে কয়েক বার বিএমটিএ নিয়ে লিখলাম কারণ পূর্ববর্তীদের কর্মকান্ড ঘৃনা ভরে উপস্থাপন করতে বাধ্য হলাম। হয়তো আপনিও আমিও থাকবো নতুন প্রজন্মের অন্তরে, ঘৃনার সাথে। আসুন বিএমটিএ কে গণতান্ত্রিক চর্চায় ফিরিয়ে আনতে হাতে হাত রাখি।


আহ্বানেঃ

সাকিব বাপ্পি

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরী মেডিসিন)

বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ।